শেখ হাসিনা রাজনীতিতে না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের নাম-নিশানাও থাকতো না

চল্লিশ বছর ধরে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে আছেন বলেই বাংলাদেশ রক্ষা পেয়েছে। আমরা ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশে যে ঘটনা প্রবাহ দেখেছি সেই ঘটনা প্রবাহ যদি এতোদিন অব্যাহত থাকতো তাহলে ২৩ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম সেই বাংলাদেশ থাকতো না। এই বিশাল একটি হুমকি ১৯৭৫ সালের পরে বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণভাবে এবং বাইরে থেকে সৃষ্টি হয়েছিলো। শেখ হাসিনা সেই হুমকি মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের পরে দুই সামরিক শাসক এবং তাদের উত্তরসুরীদের বিশাল এক অশুভ পায়তারা এবং অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে তিনি যে লড়াই সংগ্রাম করেছেন,যে প্রতিকূলতা তিনি মোকাবেলায় করেছেন সেই প্রতিকূলতার জায়গা থেকে বিবেচনা করলে এর বিপরীতে তার চল্লিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনের অর্জনের জায়গাটি এককথায় অন্যন্য,বিরল এবং দৃষ্টান্তমূলক।

তৃতীয় বিশ^,এশিয়ান,আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে এরকম উদাহরণ আর নেই। তাকে হত্যা করার জন্য ১৯ বার চেষ্টা করা হয়েছে। অশুভ শক্তিরা বুঝেছে ১৯৭৫ সালের পরে তারা যে মিশন নিয়ে বাংলাদেশে নেমেছে সেই মিশনে তারা সফল হবে না যদি শেখ হাসিনা বেঁচে থাকেন। এজন্যই তারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য বারবার চেষ্টা করেছে। এই অশুভ শক্তি সবসময় শেখ হাসিনার পেছনে ধাওয়া করছে। এই বহিঃপ্রকাশ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সারা পৃথিবীর মানুষ দেখেছে। সেইটা অতিক্রম করে গত ১২-১৩ বছর টানা রাষ্ট্র পরিচালনায় থেকে বাংলাদেশকে যেখানে এনেছেন,বিশে^র একটা মর্যাদার জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

বাংলাদেশকে সারা বিশে^র মানুষ এখন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। এই অজর্নে দেশের মানুষ তাকে সমর্থন দিয়েছে বলেই তার নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন। এই অর্জনে নেতৃত্বের জায়গায় যে কৃতিত্বের সম্পূর্ণটা শেখ হাসিনার। কারণ শেখ হাসিনা যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে না থাকতেন তাহলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ,দর্শন ও চিন্তার কোনো নাম নিশানা বাংলাদেশে থাকতো না। তাহলে বাংলাদেশের কী অবস্থা হতো সেটা শুধু আমরা না,সারা বিশে^র বড় বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলেছেন। ২০০১-২০০৬ সাল মেয়াদে তারা বলা শুরু করেছিলেন যে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নেই। এটা আফগানিস্তানের মতো একটা রাষ্ট্র হতে চলেছে। আফগানিস্তানের মতো রাষ্ট্র হলে তার চিত্রটা কেমন হতো সেটা এখন আফগানিস্তানের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি। এর জন্য বড় বিচার-বিশ্লেষণের দরকার নেই। সুতরাং সেই জায়গা থেকে আমি বলবো শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন,অগ্রগতি,ভূ-অভ্যন্তরীণ পৃষ্ঠপোষকতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বলেই আজকে বাংলাদেশ বিশে^ মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে এবং বাংলাদেশের সমস্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলো ঊর্ধ্বগতিতে আছে। সেটা বিশ^ব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। এটা হলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তার যে বিশাল অর্জন তার অতিসংক্ষিপ্ত কিছু কথা।

একইসঙ্গে তিনি শুধু বাংলাদেশে নয় বিভিন্ন অঞ্চল এবং বিশে^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ এবং অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা অনন্য,উদাহরণযোগ্য। পাকিস্তান এবং ভারত এবং ৭৮ বছর ধরে,১৯৪৭ সালের পর থেকে পারস্পারিক যুদ্ধ,সংঘর্ষ ও দ্বন্দ্বে নিয়োজিত আছে। তারা এই পর্যন্ত চারটা যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এই দুটি দেশই এখন পারমাণবিক বোমার অধিকারী। এই দুটি দেশে যদি আবার বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ লেগে যায় তাহলে এর প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়বে। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধ হয় তারপর আর বড় যুদ্ধ হয়নি। এর আগে চারটি যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৯৮ সালে এই দুই দেশে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হয়েছে। তারপরে বড় কোনো যুদ্ধ বাধেনি।

শেখ হাসিনা এখানে যে ভূমিকা রেখেছেন সেটা অনন্য। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বললেন,সশস্ত্র জঙ্গি অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠীর কোনো জায়গা বাংলাদেশের ভেতর হবে না। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো-আসাম,ত্রিপুরা,নাগাল্যান্ড,মিজুরামে যে স্বসস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ ছিলো,২০০১- ২০০৬ সালে তারা বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা,পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ও আইএসআইয়ের সহযোগিতায় এসব অঞ্চলে জঙ্গিকার্যক্রম চালিয়েছিলো। সেখানে একটা যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো ভারতের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদিদের। ভারত এটা ভালো করে জানতো যে পাকিস্তান ও আইএসআই এটা করছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের তৎকালীন জামায়াত-বিএনপি সরকারের সহযোগিতা ছিলো। এটি চলমান থাকলে ভারতে নিরাপত্তা ভয়ানক হুমকির মধ্যে পড়তো।

ভারতের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়লে তারাও বসে থাকতো না। তারাও পাকিস্তানের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নিতো অথবা সামরিক অভিযান চালাতো। ভারত তার পাল্টা প্রতিকার হিসেবে সামরিক অভিযান চালাতো। তাহলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আবার বড় ধরনের যুদ্ধ হতো। উভয়পক্ষই পারমাণবিক বোমার অধিকারী। তারা পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করলে সেটা অঞ্চল তথা পুরো পৃথিবীর জন্য মানুষের জন্য ভয়ানক হয়ে উঠতো। ১৯৪৫ সালে জাপানে যে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে তার থেকে সেটা এখন ৩০ গুন ক্ষমতাসম্পন্ন। সুতরাং ভারত-পাকিস্তানে পারিমাণবিক হামলা হলে বাংলাদেশের মানুষও মরতো।

সুতরাং বলা যায় ভারতের উগ্র,বিচ্ছিন্নতাবাদি গোষ্ঠীকে বাংলাদেশ থেকে বিতারিত করে,তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বেধে যাওয়ার যে হুমকী তৈরি হয়েছিলো সেই জায়গা থেকে শেখ হাসিনা নির্বারণ করেছেন । সুতরাং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার যে অবদান সেটা অনন্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন -অগ্রগতি,আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা এবং আমরা যে বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১ সালে আমরা যে সংগ্রাম করেছি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা রক্ষা করেছেন। তিন বাংলাদেশকে আরও উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং আজকে তার জন্মদিনে বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই তার দীঘায়ু কামনা করে এবং মানুষ প্রত্যাশা করে তিনি শান্তির পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেন।  পরিচিতি:নিরাপত্তা বিশ্লেষক